সুন্দর ত্বক কে না চায়। সুন্দর ত্বকে কালো কালো ব্ল্যাক হেডস সব সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। তাই আজ আমরা জানব, কেন বা কীভাবে হয় এই ব্ল্যাক হেডস। আর এগুলি দূর করার উপায় কী?
চর্ম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের ত্বকে রয়েছে অসংখ্য লোমকূপ। এই লোমকূপ দিয়েই ত্বক নিঃশ্বাস নেয়। মাঝে মধ্যে মৃতকোষ ও ত্বক থেকে নিঃসৃত তেল লোমকূপের গোড়ায় জমে, গোড়ার মুখগুলো বন্ধ করে দেয়। এভাবেই ব্ল্যাকহেডসের জন্ম হয়। ত্বকের স্বাভাবিক মেলানিন এবং তেল বাতাসের সংস্পর্শে এলে তা অক্সিডাইজ হয়ে কালো রঙ ধারণ করে।
অনেকে আছেন যারা ব্ল্যাক হেডসকে কালো ময়লা ভেবে ভুল করেন। আসল ঘটনা হল, ময়লার সঙ্গে ব্ল্যাকহেডসের দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই। আপনার চেহারায় ব্ল্যাকহেডস থাকা মানে এই নয় যে, আপনি অপরিচ্ছন্ন বা অপরিষ্কার। ব্ল্যাকহেডস সাধারণত থুতনি, নাক ও নাকের আশপাশের অংশেই বেশি দেখা যায়। শুধু তাই নয়। চর্ম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা অনেক সময় বংশগত কারণেও হয়ে থাকে। এছাড়া মূলত গর্ভাবস্থা এবং টিনেজ টাইমে এই ব্ল্যাক হেডসের উপদ্রব বেশি হয়। এর পাশাপাশি কিছু ওষুধ যেমন জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ, করটিক স্টেরয়েড ইত্যাদি খেলেও ত্বকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ব্ল্যাকহেডস দূর করতে অনেকেই স্ক্র্যাবিং করে থাকেন। চর্ম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্ল্যাকহেডস ত্বকের এতো গভীরে থাকে, যে ওপর ওপর স্ক্র্যাবিং করে কোনও ফল মেলে না। উল্টে অতিরিক্ত ঘষাঘষি করলে, ত্বকে জ্বালা করতে পারে। ত্বক বেশি ঘষলে বা স্ক্র্যাবিং করলে ত্বকের সেবাম উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। অনেকে আবার স্ট্রিপ ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিতেও ব্ল্যাকহেডস একেবারে দূর হয় না। শুধু কিছু সময়ের জন্য ব্ল্যাকহেডসের উপরি ভাগ দূর হয়। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্ক্র্যাবিং করা যাবে না, বা স্ট্রিপসও ব্যবহার করা যাবে না।
ব্ল্যাকহেডস তাড়াতে একগাদা টাকা খরচ করে পার্লারে যাওয়ার দরকার নেই। ঘরোয়া কিছু টিপস মেনে চললেই এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। এতে যা যা উপকরণ লাগে সব আপনার রান্নাঘরেই আছে, দামও কম।
প্রথমে মুখে গরম জলের ভাপ নিন। একটি ডিমের সাদা অংশ অনেকক্ষণ ফাটিয়ে নিন, যেন তা একটা ফোমের মতো প্যাক তৈরি হয়। এটা মুখে অল্প অল্প করে লাগিয়ে নিন। ডিমকে আঠা হিসেবে ব্যবহার করে পুরো মুখে শুকনো টিস্যু পেপার বিছিয়ে দিন। এবার শুকাতে দিন। টিস্যু বেশি ভেজা হলে প্রয়োজনে আরও একটি টিস্যু ব্যবহার করতে পারেন তার ওপর দিয়েই। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে টিস্যু নিচ থেকে উপর দিকে টেনে তুলুন। ভালোভাবে মুখ ধুয়ে বরফ ঘষে নিন।
এক মগ ফুটন্ত জলে ২টি গ্রিন টিব্যাগ দিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর ফ্রিজে ২ ঘণ্টা রেখে চা ঠাণ্ডা করে নিন। মৃদু কোনও ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে মুছে নিন। তুলা দিয়ে ঠাণ্ডা গ্রিন টি ব্ল্যাকহেডসের ওপর লাগান। যদি মুখে ব্রণ থাকে তাহলে সারা মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নরম কাপড় দিয়ে মুখ ময়েশ্চারাইজার লাগান। অন্তত ছয় সপ্তাহ একটানা প্রতিদিন কমপক্ষে একবার করে লাগাতে হবে। এক দিনও বাদ দেওয়া যাবে না। নিয়মিত গ্রিন টি খেলেও ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডস কমার সম্ভাবনা থাকে।
ব্ল্যাকহেডস তাড়াতে টকদইও খুবই কার্যকর। ৩ টেবিল চামচ টকদই, ২ টেবিল চামচ আস্ত ওটস মিশিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর ভালোমতো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। সারা মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে উষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলুন। তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ফের মুখ ধুয়ে নিন।
ব্ল্যাকহেডস দূর করতে মেথিও খুবই কার্যকরী একটি উপাদান।কীভাবে কাজে লাগাবেন মেথিকে? ১ টেবিল চামচ মেথি ৬ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে তা দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ব্ল্যাকহেডসের ওপর লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
Comentarios